সোনার তরী
গনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।রাশি রাশি ভারা ভারাধান-কাটা হল সারা,ভরা নদী ক্ষুরধারাখরপরশা–কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা -- চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।পরপারে দেখি আঁকাতরুছায়ামসী-মাখাগ্রামখানি মেঘে ঢাকাপ্রভাতবেলা—এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা॥
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।ভরা পালে চলে যায়,কোনো দিকে নাহি চায়,ঢেউগুলি নিরুপায়ভাঙে দু ধারে—দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে?বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।যেয়ো যেথা যেতে চাও,যারে খুশি তারে দাও-শুধু তুমি নিয়ে যাওক্ষণিক হেসেআমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥
যত চাও তত লও তরণী-পরে।আর আছে?-আর নাই, দিয়েছি ভরে॥এতকাল নদীকূলেযাহা লয়ে ছিনু ভুলেসকলি দিলাম তুলেথরে বিথরে-এখন আমারে লহো করুণা ক’রে॥
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরীআমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।শ্রাবণগগন ঘিরেঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,শূন্য নদীর তীরেরহি নু পড়ি-যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন