হঠাৎ দেখা / Hothat Dekha Bengali Poem by Rabindranath Thakur


হঠাৎ দেখা


রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা ,

ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন  ।।


আগে ওকে বারবার দেখেছি

লাল রঙের শাড়িতে  –

দালিম-ফুলের মত রাঙা; 

আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়, 

আঁচল তুলেছে মাথায় 

দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে  ।

মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব 

ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে , 

যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায় 

শালবনের নীলাঞ্জনে  । 

থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা  

চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে  ।। 


হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে 

আমাকে করলে নমস্কার  ।

সমাজবিধির পথ গেল খুলে 

আলাপ করলেম শুরু  –

‘কেমন আছো ‘, ‘কেমন চলছে সংসার ‘ ইত্যাদি  ।

সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে

যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে  ।

দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব ,

কোনটা বা দিলেই না  ।

বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় –

কেন এ-সব কথা ,

এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক’রে থাকা  ।।


আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে  ।

এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে  ।

মনে হল কম সাহস নয় –

বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে  ।


গাড়ির আওয়াজের আড়ালে

বললে মৃদুস্বরে ,

‘কিছু মনে কোরো না ,

সময় কোথা সময় নষ্ট করবার  !

আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই ;

দূরে যাবে তুমি ,

তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে ,

শুনব তোমার মুখে ।

সত্য করে বলবে তো ?’


আমি বললাম ,’ বলব  ।’

বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,

‘আমাদের গেছে যে দিন

একেবারেই কি গেছে  –

কিছুই কি নেই বাকি?’


একটুকু রইলেম চুপ করে ;

তার পর বললেম ,

‘রাতের সব তারাই আছে

দিনের আলোর গভীরে  ।’


খটকা লাগল , কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি  ।

ও বললে , ‘ থাক এখন যাও ও দিকে  ।’

সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে  ।

আমি চললেম একা  ।।


                                                                      - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন