রথযাত্রা | Ratha Yatra By Rabindranath Tagore Poem

 রথযাত্রা 


তাই রানী রাজাকে বললে, “চলো, রথ দেখতে যাই।

রাজা বললে, “আচ্ছা।

ঘোড়াশাল থেকে ঘোড়া বেরোল, হাতিশাল থেকে হাতি। ময়ূরপংখি যায় সারে সারে, আর বল্লম হাতে সারে সারে সিপাইসান্ত্রি। দাসদাসী দলে দলে পিছে পিছে চলল।

কেবল বাকি রইল একজন। রাজবাড়ির ঝাঁটার কাঠি কুড়িয়ে আনা তার কাজ।

সর্দার এসে দয়া করে তাকে বললে, “ওরে, তুই যাবি তো আয়।

সে হাত জোড় করে বললে, “আমার যাওয়া ঘটবে না।

রাজার কানে কথা উঠল, সবাই সঙ্গে যায়, কেবল সেই দুঃখীটা যায় না।

রাজা দয়া করে মন্ত্রীকে বললে, “ওকেও ডেকে নিয়ো।

রাস্তার ধারে তার বাড়ি। হাতি যখন সেইখানে পৌঁছল মন্ত্রী তাকে ডেকে বললে, “ওরে দুঃখী, ঠাকুর দেখবি চল্‌।

সে হাত জোড় করে বলল, “কত চলব। ঠাকুরের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছই এমন সাধ্য কি আমার আছে।

মন্ত্রী বললে, “ভয় কী রে তোর, রাজার সঙ্গে চলবি।

সে বললে, “সর্বনাশ! রাজার পথ কি আমার পথ!

মন্ত্রী বললে, “তবে তোর উপায়? তোর ভাগ্যে কি রথযাত্রা দেখা ঘটবে না।

সে বললে, “ঘটবে বৈকি। ঠাকুর তো রথে করেই আমার দুয়ারে আসেন।

মন্ত্রী হেসে উঠল। বললে, “তোর দুয়ারে রথের চিহ্ন কই।

দুঃখী বললে, “তাঁর রথের চিহ্ন পড়ে না।

মন্ত্রী বললে, “কেন বল্‌ তো।

দুঃখী বললে, “তিনি যে আসেন পুষ্পকরথে।

মন্ত্রী বললে, “কই রে সেই রথ।

দুঃখী দেখিয়ে দিলে, তার দুয়ারের দুই পাশে দুটি সূর্যমুখী ফুটে আছে।


                                                                      -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর                                    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন